Monday 14 May 2018

Musical story তে আজ মান্না দে

Hi বন্ধুরা, আমি অনন্ত নিয়ে এলাম আমাদের পেজের বিশেষ নিবেদন " Musical Story "
আজকের গল্প মান্নাদে কে নিয়ে,
আজকের গল্পটার তথ্যসুত্র দিয়ে সাহায্য করেছেন আমাদের বন্ধু "আনারুল ইসলাম"
★★★
গানের জগতে মান্না দে এক চন্দ্রপ্রতীম নাম। তার গাওয়া গান আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাইকে আচ্ছন্ন করেছে মন্ত্রমুগ্ধের মতো। এ কাতারে বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব থেকে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত তার গানে মনমুগ্ধ হয়েছিলেন।
জুহুতে মান্না দে স্বপ্নের বাড়ি ‘আনন্দম’। সামনে ফুলের বাগান। পুরো বাড়িটা মনের মতো করে সাজানো। বিশেষ করে মান্নাদার গানের ঘর। রোজ মান্না দে রেওয়াজ করেন সেই ঘরে বসে।
একদিন রেওয়াজ থামিয়ে ঘরের বাইরে এলেন কোনো দরকারে। ভোরের আলো তখনো ভাল ভাবে ফোটেনি। হঠাৎ খেয়াল করলেন বাড়ির গেটের সামনে চাদর মুড়ি দিয়ে কেউ একজন চোরের মতো দাঁড়িয়ে। স্বভাবতই মান্না দে’র সন্দেহ হলো, চোর নয় তো!
মান্না দে পা টিপে টিপে গেটের কাছে গেলেন। চেঁচিয়ে বললেন, কে? একদম হাতেনাতে ধরা পড়ে গিয়েছে। পালানোর কোনো উপায় নেই। মাথা থেকে চাদর সরাতেই তিনি একেবারে চমকে উঠলেন। এ-কি এযে প্রতিবেশী প্রখ্যাত হিন্দি কবি হরিবংশ রাই বচ্চন! (অমিতাভ বচ্চনের বাবা)। তাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মান্না দে কিছুটা বিস্মিত ও বিব্রত। মান্না দেকে আরো বিব্রত করে বচ্চন সাহেব বললেন শুধু সেদিন নয়, রোজ ভোরেই তিনি সেখানে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন। শুধু মান্না দে-র সুমধুর কণ্ঠের রেওয়াজ শুনবেন বলে। মান্না দের হাজার অনুরোধেও বাড়ির ভেতর গিয়ে রেওয়াজ শুনতে রাজি হলেন না।
মুম্বাইতে একদিন মান্না দের রেকর্ডিং। গানটা একটু ঝালিয়ে নিচ্ছেন। গানের একটা জায়গায় সুরের এমন সূক্ষ্ম কাজ ও কঠিন চলন আছে, কিছুতেই সেই জায়গাটা সঠিকভাবে গাইতে পারছেন না। মনে মনে নিজেকেই ধিক্কার দিচ্ছেন। তুমি কৃষ্ণচন্দ্র দে, দবির খান, আমন আলি খান, আব্দুর রহমান খান, গুলাম মোস্তাফা খান এমন সব ওস্তাদদের শিষ্য— রাগসঙ্গীত নিয়ে এতো চর্চা করেছ, আর এই জায়গাটা ঠিক মতো গাইতে পারছ না? সেদিন লতা মুঙ্গেসকরও রেকর্ডিং ছিল। মান্না দের গলদঘর্ম অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলেন কেয়া হুয়া মান্নাদা? লাগতা হ্যায় কুছ পড়েশান হো।’
মান্না দে ভাবলেন, তিনি এত সময় ধরে চেষ্টা করেও পারছেন না। তাকে আর কী বোঝাবেন? তবু লতাকে গানের সেই কঠিন জায়গাটা দেখালেন। লতা শুনলেন। সামান্য ভাবলেন। তার পর হারমোনিয়ামটা টেনে নিয়ে অনায়াসে সেই জায়গাটা গেয়ে শোনালেন। একেবারে সঠিক ভাবে। শুনে মান্না দে’র তো চক্ষু চড়কগাছ! শুধু বললেন, লতা তুম তো কমাল হো। মান্না দে সব সময় বলতেন লতার কণ্ঠে ঈশ্বর বাস করেন। আর মান্নাদা সম্পর্কে লতা ভাষা, পুরো মঙ্গেশকর পরিবারই মান্না দেকে হেড অব দ্য ফ্যামিলির সম্মান দিত। লতা বলতেন, মান্নাদের গান শুনে কত কী শিখি! মান্নাদে হচ্ছেন আমাদের গুরু।
সঙ্গীত জগতে নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে মিশলেও প্রত্যেক শিল্পীকে নিয়ে মান্না দের বক্তব্য ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট।
গত ১ মে অকৃত্রিম দরদী এই কন্ঠ শিল্পীর ছিল  জন্মবার্ষিকী। প্রবোধ চন্দ্র দে ডাক নাম মান্না দে ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সেরা সঙ্গীত শিল্পীদের একজন। হিন্দি, বাংলা, মারাঠি, গুজরাটিসহ অজস্র ভাষায় তিনি ষাট বছরেরও অধিক সময় সঙ্গীত চর্চা করেছিলেন।
মান্না দে গায়ক হিসেবে ছিলেন আধুনিক বাংলা গানের জগতে সর্বস্তরের শ্রোতাদের কাছে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় ও সফল সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব। এছাড়াও, হিন্দি এবং বাংলা সিনেমায় গায়ক হিসেবে অশেষ সুনাম অর্জন করেছেন। মোহাম্মদ রফি, কিশোর কুমার, মুকেশের মতো তিনিও ১৯৫০ থেকে ১৯৭০ এর দশক পর্যন্ত ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সঙ্গীত ভুবনে তার এ অসামান্য অবদানের কথা স্বীকার করে ভারত সরকার ১৯৭১ সালে পদ্মশ্রী, ২০০৫ সালে পদ্মবিভূষণ এবং ২০০৯ সালে দাদাসাহেব ফালকে সম্মাননায় অভিষিক্ত করে। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে রাজ্যের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান “বঙ্গবিভূষণ” প্রদান করে।

আপনাদের কাছে ও এই রকম কোনো মিউজিক্যাল স্টোরি থাকলে তা আমাদের সাথে শেয়ার করুন ইনবক্সে।
পেজে আসতে এখানে ক্লিক করুন

No comments:

Post a Comment